মৃগী (Epilepsy) রোগ একটি নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়বিক রোগ এবং এতে খিঁচুনি হয়।এটি একপ্রকার মস্তিষ্কের রোগ।চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে “নিউরোলোজিক্যাল ডিজিজ” বলা হয়।মৃগী রোগ যে কোনো বয়সে হতে পারে৷এটা কোনো সংক্রামক রোগ নয়৷এই রোগের প্রকৃত কারণ জানা যায়নি কিন্তু জন্মগত ত্রুটি,মস্তিষ্কে আঘাত,মস্তিষ্কে টিউমার বা সংক্রমণ,স্ট্রোক প্রভৃতিকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।জিনগত মিউটেশনকেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দায়ী বলে ধারনা করা হয়।মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্সের স্নায়ুকোষগুলোর অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক ক্রিয়ার ফলে খিঁচুনি হয়।এ রোগে রোগী বার বার স্নায়বিক কারণে ফিট অর্থাৎ হঠাৎ খিচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যায়।মৃগী রোগের একটি বৈশিষ্ট হলো রোগী বার বার খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয় কিন্তু আক্রান্তের পর আবার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়৷মৃগী রোগ থাকলেই ব্যক্তির বুদ্ধি-বিচার-বিবেচনা বোধ কমে যাবে এমন ধারনাটা সঠিক নয়।বরং মৃগী রোগে আক্রান্তদের মধ্যে খুব কম অংশের বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি হতে পারে।
🔵মৃগী রোগ কেন হয়?
মৃগী রোগের প্রকৃত কারণ জানা এখনও সম্ভব হয়নি।তবে মাথায় আঘাত পেলে,প্রসবজনিত জটিলতা অথবা দেরিতে প্রসব হলে,মস্তিস্কে প্রদাহ হলে,মস্তিস্কে টিউমার হলে,জন্মগত ত্রুটি,স্ট্রোক এবং অধিক পরিমান মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে মৃগী রোগ হতে পারে।
🔵যে সকল কারণে মৃগী রোগীর খিঁচুনি হতে পারেঃ
কিছু কিছু কারনে মৃগী রোগীর খিঁচুনি হতে পারে।যেমন- ঠিকমতো ঘুম না হলে,মানসিক চাপ বেশী থাকলে,শারীরিক অথবা মানসিকভাবে অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে,কোন সংক্রমণ রোগ অথবা জ্বরের কারনে,মদ্যপান বা নেশা জাতীও অন্য কোন পানীয় পান করলে,খুব কাছে বসে টিভি দেখলে,উচ্চ শব্দের ফলে,গরম পানিতে গোসল করলে,জোরে গান বাজনা শুনলে,কিছু কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় এবং অতিরিক্ত আলো ইত্যাদি কারনে হতে পারে।
🔵মৃগী রোগীর বৈশিষ্ট্যঃ
যেসব মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ মৃগী রোগে ভুগছেন,সে সকল মৃগী রোগীদের মধ্যে সাধারনত কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।যেমন- অস্বাভাবিক আত্মকেন্দ্রিক হয়,খিটখিটে তিরিক্ষি মেজাজের হয়,ঝগড়া করার প্রবণতা থাকে,বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি,বিষণ্ণতাগ্রস্ততা,ধর্মের দিক হতে গোঁড়া হবে,আবেগ মনোবৃত্তি বৃদ্ধি,যেকোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করবে,আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি।
🔵মৃদু ধরনের মৃগী রোগের লক্ষণঃ
*হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া৷এটা সাধারনত ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড স্থায়ী হতে পারে।অজ্ঞান হওয়ার সাথে সাথে খিঁচুনি শুরু হতে পারে।রোগী অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যেতে পারে আবার সাথে সাথে জ্ঞান ফিরে দাঁড়িয়ে যায়৷তবে এটা খুব কম ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।
*জিহ্বা ও দাঁতে কামড় লাগতে পারে।
*খিঁচুনির সময় পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়া।
*খিঁচুনির পর মাথাব্যথা,শুয়ে থাকা অথবা কিছু সময় ধরে চুপচাপ থাকা।
*খিঁচুনির সময় প্রস্রাব-পায়খানা হয়ে যেতে পারে।
🔵বড় ধরনের মৃগী রোগের লক্ষণঃ
*এই রোগ সাধারণত কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে এবং এ সময় রোগীর আচরণে কিছু পরিবর্তন আসে৷
*ফিট বা খিঁচুনি শুরু হওয়ার পূর্বে রোগী বুঝতে পারে৷
*রোগী জ্ঞান হারায় ও মাটিতে পড়ে যায়৷
*সবগুলো মাংশ পেশী টান টান হয়ে যায় এবং রোগী কান্নার মত চিৎকার করে।আবার রোগী নীল বর্ণ ধারন করতে পারে।এ অবস্থা সাধারণত ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী হয়৷
*ঝাঁকুনির মত খিঁচুনি শুরু হয় এবং মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়৷রোগী জিহ্বা কামড় দিয়ে রাখতে পারে৷
*রোগীর অজান্তেই প্রস্রাব কিংবা পায়খানা বেরিয়ে আসতে পারে৷
*রোগীর শরীর আস্তে আস্তে শীথিল হয়ে আসে,মুর্ছা যায় এবং পরবর্তীতে আস্তে আস্তে গভীরভাবে ঘুমিযে যায়৷ রোগী জেগে উঠার পর কিছু সময়ের জন্য সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারে না এবং কি ঘটেছে সে ব্যাপারে কিছু মনেই করতে পারে না৷
*কিছু ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা হতে পারে৷
*শরীরের কোনো নির্দিষ্ট অংশে খিঁচুনি--
শরীরের নির্দিষ্ট কোন স্থানে খিঁচুনি হতে পারে,মতিভ্রম হতে পারে আবার খিঁচুনি এক অঙ্গ থেকে বাড়তে বাড়তে সারা শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে।রোগী অজ্ঞান হতেও পারে আবার নাও হতে পারে৷আবার খিচুনি বন্ধ হওয়ার পর ঐ অঙ্গে প্যারালাইসিস হতে পারে৷
🔵কারও মৃগী রোগ উঠলে আশপাশের লোকদের করণীয়ঃ
মৃগী রোগে খিঁচুনি হঠাৎ শুরু হয়ে কিছুক্ষণ পর এমনিতেই থেমে যায়।সাধারণত এ ধরনের অ্যাটাক আধা মিনিট বা এক মিনিট সময় ধরে হয়।প্রকৃত পক্ষে এ জন্য কোনো কিছু করার দরকার নেই।অনেকে অস্থির হয়ে রোগীর হাত-পা চেপে ধরে,মাথায় পানি দেয় আবার অস্থির হয়ে মুখে ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করে,চামড়ার জুতা বা গরুর হাড় বা লোহার শিক ইত্যাদি মুখে চেপে ধরে।কিন্তু এসব কোন কিছুই করার দরকার নেই।এসবে কিন্তু কোনো কাজ হয় না,বরং ক্ষতিই বেশি হয়।রোগটি নিজে নিজেই থেমে যাবে এবং রোগী ঘুমিয়ে পরবে।কারও কারও খেত্রে, মাথাব্যথা হতে পারে।
🔵সাধারনত মৃগী রোগীর ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হয়ঃ
*রোগী যেমন করছে,তেমনই করতে দিন।
*রোগীকে জোরে ঠেসে ধরার কোন প্রয়োজন নেই।এতে বরং রোগীর ক্ষতি হতে পারে।
*রোগীর চারিদিকে মানুষের ভীড় করা যাবে না৷
*রোগীকে ঘুমাতে দিতে হবে৷
*রোগীর আশপাশে কোন ধারালো অস্ত্র,যন্ত্রপাতি কিংবা আগুন ইত্যাদি ক্ষতিকারক কোন কিছু যেন না থাকে যাতে সে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে।
*রাস্তায় খিঁচুনি হলে,রাস্তার পাশে নিরাপদ কোন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।
*মাথাটি পাশ ফিরিয়ে এবং সামান্য নিচের দিকে হেলান দিয়ে রাখতে হবে যেন ভালোভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে ও মুখের ফেনা বা লালা গড়িয়ে পরতে পারে৷
*যদি ১০ মিনিটেও মৃগী না থামে,তবে অবশ্যই রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে স্থানান্তর করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
🔵রোগীর জন্য করণীয়ঃ
রোগীকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবেঃ
*নিয়মিতভাবে ওষুধ সেবন করতে হবে।
*সঠিক নিয়মে এবং পর্যাপ্ত ঘুম।
*সবসময় ইতিবাচক থাকা ভালো।
*নিয়মিত মেডিটেশন এতে কাজ করে(গবেষণায় প্রমাণিত)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন