এই গরমের তাপদাহের হাত হতে বাঁচতে হলে মেনে চলুন কিছু মূল্যবান টিপস।
শীতের
পরশ কাটিয়ে এসেছে বসন্ত। লেগেছে গরমের ছোঁয়া। শুধু গরমের ছোঁয়াই নয়,ইতি
মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে তাপদাহ। গরমের তীব্রতায় সবার ত্রাহি ত্রাহি ভাব চলে
এসেছে।ফলে গ্রীষ্মের এই গরমে সুস্থ থাকাটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে প্রকৃতির
নিয়মে গ্রীষ্মে গরম পড়বে এটাই নিয়ম। এই গরমে যে কোনো সময় অসুস্থ হয়ে
পড়া স্বাভাবিক। এজন্য তো আর বাড়িতে বসে থাকলে চলবে না। যান্ত্রিক জীবনের
সাথে তাল মিলিয়ে সবাইকে প্রতিনিয়তই বাইরে যেতে হয়। তবে একটু নিয়ম মেনে
চললেই সুস্থ থাকা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু বিষয়ের দিকে বিশেষ খেয়াল
রাখতে হবে। আর তাই মূলত আমাদের পাঠকদের জন্য আজ আমরা এই গরমে সুস্থ থাকার
কয়েকটি উপায় তুলে ধরলাম।
সঠিক পোশাক নির্বাচন: এই
গরমে সুস্থ থাকার একটি প্রধান উপায় হচ্ছে সঠিক পোশাক নির্বাচন। আর এই সময়
সবচেয়ে উপকারী পোশাক হচ্ছে সূতি কাপড়ের তৈরি পোশাক। কারণ সারাদিন বাইরে
থাকার ফলে শরীরে যে ঘাম হয় তা সূতি কাপড় খুব সহজেই শুষে নিতে পারে। এছাড়া
সূতির পাশাপাশি ধূপিয়ান, লিলেন, টাইডাই ও কটনও নির্বাচন করতে পারে। কাতান,
টিস্যু, জর্জেট এই ধরনের কাপড় যথা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। এছাড়া যারা বাইরে
যাওয়ার সময় শাড়ি পরে থাকেন তারা সূতি, খাদি কাপড় নির্বাচন করতে পারেন।
আজকাল সূতি কাপড়ের উপর অনেক ধরনের হালকা ডিজাইনের নকশা দেখা যায়। এসব
পোশাকও সবার গায়ে খুব ভালো মানিয়ে যায়। এছাড়া রঙ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও অনেক
সতর্ক থাকা উচিত। এ সময় উজ্জ্বল রঙের পোশাক না পরাই ভালো। হালকা নীল,
ধূসর, বালামী, হালকা গোলাপী, সাদা, মেজেন্টা এই ধরনের রঙ বেশী ভালো হয়।
ছেলেদের ক্ষেত্রে টি শার্ট, থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট অথবা সূতির চেক শার্ট
বেছে নিতে পারেন। এই ধরনের পোষাক সব যায়গায় ব্যাবহারের জন্য খুবই মানানসই
হয়।
প্রয়োজনে টেম্পারেচার শীতল রাখা
অনেক সময় নিজ ঘরে মাত্রারিক্ত আদ্রতার
ফলে ডায়াবেটিকস রোগিদের মারাত্তক শারীরিক অসুস্থা দেখা দেয় আর মুলত একারণেই
যতটা সম্ভব নিজ ঘরকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা। ফলে নিজ ঘর সবসময় নিয়মিত শীতল থাকবে,
প্রচুর পরিমাণে পানি ও পানীয় পান:
এই সময় শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে পানি শরীর থেকে বের হয়ে
যায়। ফলে শরীরে পানিশূন্যতা ও বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। তাই এই সময়
সুস্থ থাকতে চাইলে প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২
গ্লাস পানি পান করুন। এছাড়া পানির সাথে সাথে বিভিন্ন ফলের জুস যেমন আম,
তরমুজ, আখের রস, ডাবের পানি পান করুন। এ সময় বাড়িতে স্যালাইন অথবা গ্লুকোজ
রাখুন। কারণ এগুলো শরীরে পানিশূন্যতা কমিয়ে শরীরে লবনের পরিমাণ ঠিক রাখতে
সাহায্য করে। তবে রাস্তার পাশে অস্বাস্থকর পানীয় থেকে সাবধান থাকুন। কারন
এগুলো পানে শরীর সুস্থ থাকার পরিবর্তে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
খাবারের ক্ষেত্রে সতর্কতা:
এই
সময় সচরাচর ভারী খাবার না খাওয়াই ভালো। এছাড়া অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবারও
এই সময় এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ ভারী খাবার খেলে এই সময় অতিরিক্ত গরম লাগবে
এবং শরীর খারাপ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে বিকালের নাস্তায় হালকা
ফলমূল ও ফলের রস খেতে পারেন। এতে শরীর সুস্থ থাকবে।
সঠিক জুতা নির্বাচন:
গরমের সময় সবসময় খোলামেলা জুতা পরা উচিত। এতে শরীর ঠান্ডা থাকে। এ সময়
কখনো মোজা পরা উচিত নয়। এতে পায়ে বাতাস চলাচল করতে পারে নয়া এবং শরীর গরম
থাকে। প্রতিদিন ব্যাবহারের জন্য খোলামেলা স্যান্ডেল বেছে নিতে পারেন।
পারফিউম
ব্যবহার করুন দেখেশুনে:
যদি গরম বেশি পড়ে তাহলে ভারী ও কড়া গন্ধের পারফিউম
মাখবেন না। কড়া পারফিউমে আপনার শরীরে গরম লাগার ভাব বেড়ে যাবে। এ সময়
একেবারে হালকা গন্ধের পারফিউম মাখুন। কিছু কিছু পারফিউম আছে যা মাখলে শরীরে
ঠাণ্ডা অনুভূত হয়।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন:
কমিয়ে আনুন শারীরিক পরিশ্রম, গরমে বেশি ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই।
ব্যায়ামে বাড়বে শরীরের তাপমাত্রা। তবে শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে যেটুকু
ব্যায়াম করবেন তা যেন সীমিত থাকে। ব্যায়ামের মাধ্যমে ঘেমে গিয়ে একাকার হয়ে
ওঠার কথা ভুলে যান; বরং এ চিন্তাটা তুলে রাখুন শীতকালের জন্য। এই সময়ে খুব
ভোরে হেঁটে আসুন খোলা বাতাসে কিংবা সাঁতার কাটুন কিছুক্ষণ। ব্যস, এর বেশি
কিছু নয়।
বিরত থাকুন ধূমপান থেকে:
আগে সিগারেটের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করুন সেটা। ধূমপানে শরীর আরো গরম হয়ে
উঠবে। বাড়বে ত্বকের শুষ্কতা। বরং তার বদলে খান একটি করে ভিটামিন সি
ট্যাবলেট। সজীব লাগবে নিজেকে।
চা,
কফি ও অ্যালকোহল পরিহার করুন: পরিত্যাগ করুন চা, কফি ও অ্যালকোহল।
এগুলো বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে আপনার শরীরে। বাড়িয়ে দেবে
পানিশূন্যতা। আপনার তৃষ্ণা মেটাতে স্রেফ পানি পান করুন। অথবা কোমল পানীয়।
চা, কফি বা অ্যালকোহল একেবারেই নয়।
এড়িয়ে চলুন সূর্যালোক:
চেষ্টা করুন ছায়ার মধ্য দিয়ে চলতে। রোদে গেলে মাথায় রাখুন চওড়া ক্যাপ,
স্কার্ফ অথবা ছাতা। রিকশায় চড়লে হুড উঠিয়ে চলুন। ত্বকে মেখে চলুন
সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন। রোদে বাইরে বেরোলেই সানগ্লাস পরে নেবেন।
কিন্তু খেয়াল রাখবেন সানগ্লাসটি যেন চোখের সাথে চমত্কার ফিটিং হয়। বেছে
নিন ধূসর অথবা সবুজ রঙের কাচ। বাদামি রঙের কাচ হলে ভালো হয়। এই কাচগুলো
সূর্যালোক প্রতিহত করবে।
গোসল করুন একাধিক বার:
সবচেয়ে
ভালো হয় যদি ঠাণ্ডা বাথটাবে চুপচাপ শুয়ে থাকেন এবং মাঝে মাঝে সেখানে ছুড়তে
থাকেন হাত-পা। তা সম্ভব না হলে দিনে দু’তিনবার গোসল করুন। শরীরে তেলজাতীয়
কিছু মাখবেন না। সময় একটু বেশি নিয়ে গোসল করুন।
শুয়ে পড়ুন মেঝের ওপর:
ফোমের
বিছানা কিংবা জাজিম, তোশক গুটিয়ে রাখুন। ভালো করে ধুয়ে মুছে সটান করে
শুয়ে পড়ুন মেঝের ওপর। আপনার কোমরে কিংবা পিঠে ব্যথা থাকলে তো সোনায়
সোহাগা। গরম তাড়ানোর পাশাপাশি ব্যথার চিকিৎসাও হয়ে গেল। মেঝের শীতল
অনুভূতি শীতল করে তুলবে আপনার শরীরকে। চমৎকার ঘুম হবে আপনার। মাথার ওপর
অবিরাম ছেড়ে রাখুন ফ্যান। দেখবেন গরম কোথায় পালায়!
গ্রীষ্মের এই গরম থেকে নিজেকে বাঁচাতে ও
সুস্থ থাকতে আলোচিত এসব বিষয় মেনে চলুন। তবে এটা ভাবার কোন সুযোগ নেই যে,
এগুলোই একমাত্র পন্থা। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, কি করলে আপনার ভালো লাগে-
সেটা করার চেষ্টা করুন। তবে আলোচিত বিষয়গুলো চিকিৎসকরা পরামর্শ হিসেবে দিয়ে
থাকেন। তাই এগুলো মেনে চললে আপনার কাজে লাগতে পারে। তাই গরমে আর কষ্ট না
করে শুরু করুন চর্চা।
আশা করি পোস্টটি পড়ে ভালো লেগেছে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন