বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০১৯
অতিরিক্ত ওজন কমায় পেঁপে
পেঁপে আমরা তরকারি বা ফল হিসেবে খেয়ে থাকি। তবে পেঁপে খেলেও এর গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন তারা পেঁপে খেতে পারেন। পেঁপে পেটের জন্য খুবই উপকারি।
পেঁপেতে থাকা খনিজ, ভিটামিন ও অন্যান্য উপাদান শরীর ভালো রাখে। এছাড়া পেঁপে অতিরিক্ত ওজন কমায়।
পুষ্টি-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এমনি তথ্য জানা গেছে।
আসুন জেনে নেই পেঁপে যেভাবে অতিরিক্ত ওজন কমায়।
১.একটি পেঁপেতে সাধারণত ৬৫’রও ক্যালরি থাকে। সকালের নাস্তায় খেতে পারেন পেঁপে। পেঁপের আঁশের পরিমাণ বেশি ও অল্প ক্যালরির জন্য ওজন কমাতে সাহায্য করে।
২.পেঁপে প্রচুর খাদ্য আঁশ সমৃদ্ধ হওয়ায় দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে। পেঁপে অস্বাস্থ্যকর ক্যালরি গ্রহণের ঝুঁকি কমে যায়। ফলে ওজন কমে।
৩.পেঁপের আঁশ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন শরীর সুস্থ রাখে তেমনি আঁশ হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। পাচনতন্ত্র ভালো থাকলে তা শরীর সুস্থ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৪.পেঁপেতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, শরীরের ‘ফ্রি র্যাডিকেল’য়ের বিরুদ্ধে কাজ করে। ফলে ওজন কমে।
৫. পেঁপে ক্যালসিয়াম, আঁশ, প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। যা শরীরের বিপাক বাড়ায়।
৪ নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে
৪ নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে
ডায়াবেটিস খুব পরিচিত একটি রোগ। বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে ডায়াবেটিস। বাংলাদেশে এটি প্রায় ঘরোয়া রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কেউ যদি চারটি নিয়ম মেনে চলেন তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে।
পারিবারিক ইতিহাস, ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাবার, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ইত্যাদি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। মিষ্টি বেশি খেলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে আর এ কারণে পরোক্ষভাবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কিছুটা বাড়ে।
ডায়াবেটিস কি?
স্বাভাবিকের চেয়ে রক্তে বেশি শর্করা বা সুগার থাকলে তাকে বলা হয় ডায়াবেটিস মেলাইটাস বা সংক্ষেপে ডায়াবেটিস। বাংলায় এই রোগকেই মধুমেহ বলা হয়।
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ
ডায়াবেটিস প্রধানত দুই প্রকারের। টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু। এ ছাড়াও আরও বেশ কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে।
টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস কী?
টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস প্রধানত কম বয়সীদের হয়। বিভিন্ন কারণে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামক হরমোনটি নির্গত হয় না। এই অবস্থায় ইনসুলিনের অভাব পূরণে ইনজেকশন দেয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। মোটামুটিভাবে সব ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ১০ শতাংশ রোগী এই ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন।
টাইপ টু ডায়াবেটিস কী?
এই ধরনের ডায়াবেটিস সবচেয়ে বেশি হয়। ভারতেও টাইপ টু ডায়াবেটিসে বেশিসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হন। মধ্যবয়স্ক, উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি, প্রধানত পরিশ্রমবিমুখ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত মানুষ এই রোগের শিকার হন। তবে আগেও বলেছি বংশানুক্রমিক ইতিহাস এবং জিনগত প্রভাবও এই রোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে।
আসুন জেনে নেই যে ৪ নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে।
১ .স্বাস্থ্যকর ও আঁশযুক্ত খাবার ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। উচ্চ আঁশসমৃদ্ধ খাবার। ফল, সবজি, বাদাম ইত্যাদির মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ আঁশ।
২. অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই অতিরিক্ত ওজন কমানোর চেষ্টা করুন। উচ্চতার সঙ্গে ওজনের ভারসাম্য থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি কমবে।
৩. সুস্থ থাকতে হলে ব্যায়াম করা বিকল্প নেই। ব্যায়াম করা টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট হাঁটা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
৪. ধূমপান ইনসুলিন রেসিসটেন্স তৈরি করে। এটি ডায়াবেটিসের পূর্বাভাস। তাই ধূমপান পরিহার করুন
শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৯
গাড়িতে চড়লেই যাঁদের বমি হয়
গাড়িতে চড়লেই যাঁদের বমি হয়
গাড়িতে উঠে বসেছেন কোথাও যাবেন বলে। কিছুদূর যেতেই শরীরটা কেমন যেন লাগতে শুরু করল। মাথা ঘুরছে, বমি বমি লাগছে, বমি হয়েও যেতে পারে। এ সমস্যার নাম ‘মোশান সিকনেস’। বাস, গাড়ি, ট্রেন, স্টিমার, লঞ্চ ইত্যাদিতে চড়লে অনেকেরই এ সমস্যা হয়ে থাকে। যানবাহন চলতে শুরু করলে অন্তঃকর্ণের তরল পদার্থে নড়াচড়া শুরু হয়। অন্তঃকর্ণ চলার সংকেত পাঠায় মস্তিষ্কে। কিন্তু গাড়ি চলন্ত অবস্থায় আপনার চোখের দৃষ্টি যদি থাকে গাড়ির ভেতরে, তখন আপনার চোখ বলে, আপনি চলছেন না, স্থির আছেন। এমন অবস্থায় আপনার মস্তিষ্ক, চোখ আর অন্তঃকর্ণের সংকেতের মধ্যে অসামঞ্জস্য তৈরি হয়। শুরু হয়ে যায় মোশান সিকনেস। এ সমস্যা পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চললে উপকার পেতে পারেন:
• চলন্ত অবস্থায় যানবাহনের ভেতরে দৃষ্টি নিবদ্ধ না রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকান। অথবা সামনের গ্লাস দিয়ে যত দূর সামনে দৃষ্টি যায়, তাকিয়ে থাকুন, প্রকৃতি দেখুন।
·সামনের দিকে বা জানালার কাছে আসন নিন। জানালাটা খুলে দিন। ঠান্ডা বাতাস লাগবে শরীরে। ভালো লাগবে।
• হালকাভাবে দুচোখ বন্ধ করে রাখুন। অথবা একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব নিয়ে আসুন। উপকারে আসবে।
• বই, পত্রিকা ইত্যাদি পড়তে থাকলে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
• গাড়িতে আড়াআড়িভাবে বা যেদিকে গাড়ি চলছে, সেদিকে পেছন দিয়ে বসবেন না। বমি বমি ভাব বা বমি হওয়ার আশঙ্কা কমবে।
• যাত্রা শুরুর আগে ভরপেট খাবেন না বা পানি পান করবেন না।
• কিছু ওষুধ আছে, যেগুলো বমি বা বমি বমিভাব বন্ধ করতে পারে, চিকিৎসকের পরামর্শমতো তা নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করতে পারেন গাড়িতে ওঠার আগে। গাড়িতে বসে আদা কিংবা চুইংগাম চিবালেও উপকার পাওয়া যায়।
• ‘গাড়িতে উঠলেই আমার বমি হবে’—এমন চিন্তা মনে আনবেন না। অন্য চিন্তা করুন। প্রকৃতি দেখুন। দেখবেন ভ্রমণেও আপনি সুস্থ আছেন।
জেনে নিন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিগুলো
জেনে নিন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিগুলো
বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আমাদের শরীর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ঠিক রাখতে চেষ্টা করে। দেহের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের শিরাগুলো প্রসারিত হয়ে অতিরিক্ত তাপ বাইরের পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া ঘামের মাধ্যমেও শরীর শীতল হয়। প্রচণ্ড গরমে অতিরিক্ত ঘামার কারণে শরীর পানি ও লবণ হারায়। ফলে শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ঝিমঝিম করা, মাংসপেশিতে ব্যথা, প্রচণ্ড পিপাসা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। এ অবস্থার নাম ‘হিট ক্র্যাম্প’ বা ‘হিট এক্সোশন’। প্রচণ্ড গরমে ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় অবস্থান করলে বা বেশি পরিশ্রম করলে অনেক সময় শরীরের পক্ষে তাপ নিয়ন্ত্রণ করা আর সম্ভব হয় না। ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে উঠে যায়। একে বলে ‘হিট স্ট্রোক’।
হিট স্ট্রোকে ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যায়, শরীরের ঘাম বন্ধ হয়ে যায়। নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়। রক্তচাপ ও প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়। খিঁচুনি হতে পারে। রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। হিট স্ট্রোকের কারণে জীবনসংশয়ও হতে পারে।
কাদের ঝুঁকি বেশি
প্রচণ্ড গরমে ও আর্দ্র পরিবেশে যেকোনো ব্যক্তিরই হিট স্ট্রোক হতে পারে। তবে প্রখর রোদে খোলা মাঠে যাঁরা কায়িক পরিশ্রম করেন, যেমন কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক, তাঁদের হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেশি। প্রখর রোদে পথচারী দীর্ঘ সময় হাঁটাহাঁটি করলে বা স্কুলের ছেলেমেয়েরা রোদে স্কুলের মাঠে খেলাধুলা করলেও হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি আছে। কারখানা বা ঘরের ভেতর যাঁরা গরম ও আর্দ্র পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ কাজ করেন (যেমন পোশাককর্মী) তাঁদেরও হিট স্ট্রোক হতে পারে। শিশু ও বৃদ্ধদের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা এমনিতেই কম, তাই তাঁরা বেশি ঝুঁকিতে আছেন। স্থূলতা, কিছু ওষুধ, যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন, মানসিক রোগের ওষুধ ঝুঁকি বাড়ায়।করণীয়
হিট স্ট্রোক হলে রোগীকে দ্রুত যথাসম্ভব ঠান্ডা পরিবেশে নিয়ে যান। পরনের কাপড় খুলে পানি দিয়ে শরীর ভিজিয়ে ফ্যান বা এসি ছেড়ে দিন। প্রয়োজনে কিছুক্ষণ ভেজা কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখুন। বগলে ও কুঁচকিতে বরফ দিন। রোগীর জ্ঞান থাকলে তাঁকে পানি ও খাওয়ার স্যালাইন খেতে দিন। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যেতে পারে। গরমে যথাসম্ভব ঘরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন। বাইরে যেতে হলে পাতলা ঢিলেঢালা সুতি জামাকাপড় পরুন এবং ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করুন। প্রচুর পানি পান করুন। বেশি ঘামলে খাওয়ার স্যালাইনও পান করতে পারেন। রোদে কাজ করতে হলে মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নিন এবং পানি, ফলের রস ও স্যালাইন পান করুন। চা বা কফি কম খাবেন, এগুলো শরীরের তাপ বাড়ায়। এই প্রচণ্ড গরমে যাঁরা দীর্ঘ যাত্রা করে ঈদে বাড়ি যাবেন, তাঁরা এ বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ: বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
হঠাৎ শ্বাসটানে যা করবেন
হঠাৎ শ্বাসটানে যা করবেন
হাঁপানি রোগীদের শ্বাসটান আকস্মিকভাবেই ওঠে। বিশেষ করে হঠাৎ ঠান্ডা আবহাওয়ায়, মৌসুম পরিবর্তনের সময়, ধুলাবালু লাগলে, ঘর ঝাড়মোছ করলে বা ফুলের পরাগরেণুর সংস্পর্শে রোগীর হাঁপানির টান ওঠে। ভাইরাস সংক্রমণ, সর্দি-কাশিও এই সমস্যার জন্য দায়ী।
যাদের হাঁপানি আছে তাদের জেনে রাখা ভালো এমন হঠাৎ শ্বাসটান উঠলে, বিশেষ করে ছোটদের হলে, সঙ্গে সঙ্গে কী করা উচিত।
• রোগীকে সোজা হয়ে বসতে বলুন ও আশ্বস্ত করুন যে আতঙ্কের কিছু নেই।
• উপশমকারী সালবিউটামল বা সালবিউটামল ও ইপরাট্রোপিয়ামযুক্ত ইনহেলার স্পেসারের সাহায্যে ধীরে ধীরে পাঁচটি চাপ নিন। স্পেসার না থাকলে কাগজের ঠোঙা ব্যবহার করতে পারেন।
• স্পেসারের মধ্যে প্রতিবার এক চাপ দিয়ে তা থেকে পাঁচবার শ্বাস নিতে হবে। এভাবে পাঁচবার চাপ দিন। বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে খেয়াল করুন, শ্বাস বড় করে ওষুধ ঠিকমতো টেনে নেওয়া হচ্ছে কি না, খেয়ে ফেললে কাজ হবে না।
• ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। বিশ্রাম নিন। তারপরও শ্বাসকষ্ট না কমলে আবার পাঁচ চাপ নিন। এভাবে মোট পাঁচবার (মোট ২৫ চাপ) নেওয়া যেতে পারে।
• এরপরও শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির টান না কমলে রোগীকে কাছাকাছি হাসপাতালে নিতে হবে বা নেবুলাইজার যন্ত্রের সাহায্য লাগবে। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত পাঁচ চাপ করে ইনহেলার নিতে থাকবেন।
• শুরুতেই জিব, নখ বা আঙুল নীল হয়ে এলে, শ্বাসকষ্টের জন্য কথা পর্যন্ত না বলতে পারলে বা চেতনা হারিয়ে যেতে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়াই ভালো। এ ক্ষেত্রে নেবুলাইজার ছাড়াও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়।
গরুর দুধে শিশুর অ্যালার্জি
গরুর দুধে শিশুর অ্যালার্জি
গরুর দুধে প্রায় ২০ ধরনের প্রোটিন আছে, যার মধ্যে পাঁচটি বেশ অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী। যেমন: বিটা ও আলফা ল্যাকটো গ্লোবুলিন, কেসিন, বোভাইন সিরাম এলবুমিন ও গামা গ্লোবুলিন। অনেক শিশুরই গরুর দুধে অ্যালার্জি হওয়াটা বিচিত্র নয়। শিশুকে মাতৃদুগ্ধ থেকে ধীরে ধীরে গরুর দুধে অভ্যাস করানোর সময় এটি ধরা পড়ে। সে কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুর দুই-তিন বছর বয়সের দিকে এটা শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এসব শিশুর শুধু গরুর দুধ নয়, দুধের তৈরি যেকোনো খাবারে অ্যালার্জি হতে পারে।
গোদুগ্ধ অ্যালার্জির প্রায় ৮০ শতাংশ হলো তীব্র মাত্রার। এতে রক্তে আইজি-ই বেশি পাওয়া যায়। স্কিন টেস্ট পজিটিভ হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারিবারিক ইতিহাস থাকে।
কারও কারও (২০ শতাংশ) অ্যালার্জি ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়, ফলে সহজে নির্ণয়যোগ্য নয়। এগুলোতে রক্তে আইজি-জি বা এম বেশি থাকতে পারে। এসব শিশুর অনেকে ঠিকভাবে বাড়ে না, অসুখ লেগেই থাকে।
১-২ শতাংশ শিশুর গরুর দুধে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া প্রথম বছরেই দেখা দেয়। লক্ষণগুলো হলো: বমি, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, শরীরে র্যাশ, অ্যাকজিমা, নাকের অ্যালার্জি, কানপাকা অসুখ, অ্যাজমার মতো দীর্ঘমেয়াদি কাশি ও বুকে শোঁ শোঁ শব্দ। এরা রক্তস্বল্পতায় ভোগে ও ওজনে কম বাড়ে। ভগ্নস্বাস্থ্য থাকে।
কী করবেন?
১. শিশুর প্রথম বছরে গোদুগ্ধ বা দুগ্ধজাত খাবার পরিহার করা উচিত। প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ এবং তারপর মায়ের দুধের সঙ্গে অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার দিন। এক বছর পার না হলে গরুর দুধ বা দুধের তৈরি কোনো খাবার দেবেন না।
২. গরুর দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পর পেটব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, ত্বকে র্যাশ ইত্যাদি দেখা দিলে সন্দেহ করতে হবে যে এতে অ্যালার্জি আছে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা ও স্কিন টেস্ট করে নিশ্চিত হতে পারেন। সমস্যা শনাক্ত হলে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। কারও কারও ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকে, যাদের দুগ্ধজাত খাবার খেলেই পেট ফাঁপে ও বদহজম হয়। তারাও দুধ এড়িয়ে চলবে।
৩. গরুর দুধের অ্যালার্জির কারণে যদি শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, বারবার রক্তস্বল্পতায় বা শ্বাসকষ্টে পড়ে, তবে তার খাবার তালিকা থেকে গোদুগ্ধ উপাদান বাদ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমিষের চাহিদা পূরণ করতে অন্যান্য আমিষযুক্ত খাবার, যেমন: মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, টফি, সয়া ইত্যাদি বেশি করে দিতে হবে। কখনো দেখা যায়, দুধে অ্যালার্জি বা ইনটলারেন্স থাকলেও দই খেলে কিছু হয় না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শিশুর খাদ্যতালিকা পরিকল্পনা করুন।
অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী
বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ডেঙ্গুর মৌসুম আবার এল
আবার এল ডেঙ্গুর মৌসুম
এবার একটু আগেভাগেই শুরু হয়েছে ডেঙ্গু মৌসুম। প্রতিবছরই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আর বাড়ছে ডেঙ্গু রোগের নানা জটিলতা। মাঝেমধ্যে নতুন রূপ নিয়ে আসে ভাইরাসটি। ডেঙ্গু একধরনের ভাইরাসজনিত জ্বর, যা এডিস মশা দিয়ে ছড়ায়। বর্ষাকালেই এর প্রকোপ বেশি
কখন সন্দেহ করবেন আপনার ডেঙ্গু হয়েছে
• প্রথম দিন থেকেই তীব্র জ্বর। (সাধারণত ১০২ ডিগ্রি বা এর ওপরে)।
• জ্বরের সঙ্গে তীব্র শরীর, মাংসপেশিতে, গিরায় গিরায়, কোমরে ও চোখের পেছনে ব্যথা।
• জ্বরের ২-৩ দিনের মধ্যে শরীরে লাল র্যাশ ওঠা, যা চুলকাতে পারে।
• দাঁতের মাড়ি, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, চামড়ার নিচে রক্তের দাগ দেখা দেওয়া, বমি/পায়খানার সঙ্গে রক্তপাত বা মেয়েদের মাসিকের সঙ্গে বেশি রক্তপাত।
কী করবেন
ডেঙ্গু হয়েছে সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রচুর পানি, তরল খাবার (স্যালাইন, ডাবের পানি, তাজা ফলের রস) খেতে থাকুন। জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামলের বাইরে অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ অথবা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাবেন না।
ডেঙ্গু কখনো কখনো প্রাণহানিকর
একজন মানুষের জীবদ্দশায় চারবার ডেঙ্গু হতে পারে চার প্রজাতির ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে। যত বেশিবার ডেঙ্গু হবে, তত বেশি ডেঙ্গু অধিক জটিল আকার নিয়ে হাজির হবে।
কী কী লক্ষ রাখবেন
দাঁতের মাড়ি, পায়খানা, প্রস্রাব, মেয়েদের মাসিকের সঙ্গে অতিরিক্ত রক্ত গেলে, চামড়ার নিচে রক্ত ফোঁটা জমা হলে সতর্ক হোন। শ্বাসকষ্ট হলে, পেট ফুলে গেলে, অতিরিক্ত বমি হলে, চোখ হলুদ হয়ে গেলে; মাথা ঘুরিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
রক্ত অথবা প্লেটলেট এবং শিরাপথে স্যালাইন কাদের লাগবে
• প্লেটলেট কাউন্ট কমে গেলেই অস্থির হওয়ার কিছু নেই। অনেক সময় ৫,০০০-১০,০০০ হলেও প্লেটলেট দিতে হয় না। শুধু শরীরের কোথাও রক্তপাত হলে অথবা রক্তপাতের লক্ষণ দেখা দিলেই রক্ত/প্লেটলেট দিতে হবে।
• মুখে একদমই খেতে না পারলে অথবা অতিরিক্ত বমি/পাতলা পায়খানা হলেই কেবল শিরাপথে স্যালাইন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
·কীভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যায়
• বাড়িতে বা বাড়ির আশপাশে কোথাও পানি জমতে দেবেন না। টব, ভাঙা বাটি, নারকেলের মালা, এসির পানি, পরিত্যক্ত টায়ার, ছোট–বড় গর্ত সব খেয়াল রাখবেন।
• বাথরুমের বালতিতে পানি ধরে রাখা লাগলে বালতিতে ঢাকনা ব্যবহার করবেন।
• মশারি ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে কিছুক্ষণ পরপর মশার ওষুধ স্প্রে করুন।
ডা. রাশেদুল হাসান
সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা