আহলান সাহলান মাহে রামাদান!! সুস্বাগত হে মাহে রমজান!! রহমত বরকত মাগফেরাতের এই রমজানকে নিয়ে
মানুষ নানা ধরণের প্রস্তুতি নেন! এর পাশাপাশি যারা বিভিন্ন রোগে ভোগেন বিশেষ করে ডায়াবেটিস তারা আবার প্রস্তুতির পাশাপাশি চিন্তায়ও থাকেন কিভাবে রাখব রোজা??? রোজা রাখতে পারব তো???
তাদের জন্যই আজকের এই লেখা...
*রোজা রাখা::
আসলেই কি ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখতে পারেন?? হুম, ডায়াবেটিস রোগীরা একজন স্বাভাবিক মানুষের মতই রোজা রাখতে পারবেন অল্প কিছু রোগী ছাড়া!! তবে জানতে ও মানতে হবে কিছু অতিরিক্ত নিয়মকানন!!
বলে রাখা ভাল, রোজা ভয়ের কারণ নয় বরং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের মাধ্যম হতে পারে!!
*কারা রোজা নাও রাখতে পারেন??
যেসকল রোগীর গত ৩ মাসে হাইপো (৪ এর কম) বা হাইপার বা কিটোএসিডোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এসকল সমস্যা মাঝে মাঝেই দেখা যায় তাদের শরীর সায় না দিলে তারা রোজা নাও রাখতে পারেন...
*ঔষুধ কিভাবে খেতে হবে??
১. সকালের ওষুধ/ইনসুলিন ইফতারের সময় এবং রাতের ওষুধ/ইনসুলিন সেহরিতে খেতে/নিতে হবে...
২. সাধারণত সকল ট্যাবলেট জাতীয় ওষুধ আগের নিয়মেই চলবে!! কিন্তু যারা Glimepride (Dimerol 80) বা Glibenclamide ( Dibenol 5) এ গ্রুপের ওষুধ খান তারা এই ওষুধ পূর্বের নিয়মের অর্ধেক খাবেন! Metformin ( Oramet/ Metfo) সহ অন্যান্য সকল ওষুধ আগের ডোজেই চলবে!!
৩. যারা দিনে ১ বার ইনসুলিন নেন তারা পুর্বের নিয়মে রাত ৯ টায় ইনসুলিন নিবেন কিন্তু ডায়াববেটিসের মাত্রা অনুযায়ী পুর্বের ডোজের চেয়ে ২০-৩০% কম নিবেন!!
যেমন, ধরেন আগে যদি ১০ ইউনিট নিত, এখন নিবে ৭ বা ৮ ইউনিট!!
৪. যারা দিনে ২/৩ বার ইনসুলিন নিতেন এখন নিবেন ২ বার! এক্ষেত্রে সকালের ডোজ পুর্বের নিয়মে সন্ধ্যায় নিবেন! পানি দিয়ে ইফতারি ভেঙে ইনসুলিন নিতে হবে!! ইনসুলিন নিয়েই ইফতারি শেষ করতে হবে! এরপর নামাজ পড়তে যাবেন!! মনে রাখতে হবে ইফতারি শেষ না করেই তাড়াহুড়ো করে নামাজ ধরার জন্য মসজিদে যাওয়া যাবে না!! প্রয়োজনে বাসায় নামাজ পড়বেন কিন্তু ইফতারি আগে শেষ করতে হবে নতুবা হাইপো হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে!
আবার, রাতের ডোজ সেহরিতে নিতে হবে!! তবে এক্ষেত্রে রোজার পূর্বে যত ইউনিট নিত পুরো রোজার মাসে নিবে তার অর্ধেক!! অর্থাৎ আগে যদি কেউ ১২ ইউনিট নিত এখন নিবে ঠিক তার অর্ধেক বা ৬ ইউনিট!!
*রোজা রাখা অবস্থায় খারাপ লাগলে কি করতে হবে??
যারা Type -1 ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসের সাথে হ্নদরোগ, কিডনী বা লিভার সমস্যায় ভুগছেন তারা সকাল ও বিকেলে ডায়াবেটিস গ্লুকোমিটার দিয়ে পরীক্ষা করবেন! রোজা রাখা অবস্থায় ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা যায়!! তাছাড়া খারাপ লাগলেও যেকোন সময় পরীক্ষা করা যায়!
যদি ডায়াবেটিস ৪ এর কম হয় তাহলে এটা হাইপো! সেক্ষেত্রে অতি দ্রুত ১৫ গ্রাম বা ৩ চামচ গ্লুকোজ বা চিনি খেয়ে ফেলতে হবে! যদি পরীক্ষা করার সুযোগ না থাকে সেক্ষেত্রে মাথা ঘোরা, শরীর অতিরিক্ত ঘামা, প্রচুর ক্ষুধা লাগা, মাথা ঝিমঝিম করা ইত্যাদি সমস্যা হলেই রোজা ভাঙতে হবে!
এজন্য সুবিধার জন্য ৩ চামচ গ্লুকোজ বা চিনি সব সময় সাথেই রাখতে হবে!!!
আবার ডায়াবেটিস যদি ১৬ র বেশি হয় সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ১ ডোজ ইনসুলিন নিতে হবে! ডায়াবেটিস রাখা অবস্থায় ইনসুলিন নেওয়া যাবে! তবে কত ইউনিট ইনসুলিন নিতে হবে ইহা ডাক্তারের সহিত পরামর্শ করে নিতে হবে! এ সংক্রান্ত একটি স্বীকৃত ফতোয়া আছে বাইতুল মোকাররমের শরীয়াহ বোর্ডের!! তবে কিটো এসিডোসিস বা পানি শুন্যতা হলে রোজা ভাংতে হবে এবং চিকিৎসা নিতে হবে!
*কি খাবেন??
খাবারের জন্য ডায়াবেটিস বইয়ের খাদ্য তালিকা অনুসরণ করবেন তবে আলু, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি ও অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় সকল খাদ্য পরিমাণে কম খাবেন! ইফতারি করার সময় পানি, লেবুর শরবত বা ডাবের পানি ব্যবহার করবেন! খেজুর খাওয়া যাবে!!
*ব্যায়াম কি করব?
যারা তারাবীর নামাজ পড়বেন তাদের জন্য আর অতিরিক্ত ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই! তবে চাইলে তারাবীর পর বা রাতের খাবারের পর হালকা হাটাহাটি করতে পারেন! তবে দিনের বেলায় ভুলেও ব্যায়াম করা যাবে না, এতে হাইপো হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে!
শেষ কথা:
সঠিক নিয়ম কানন জানুন, অপরকে জানান! সঠিক নিয়ম পদ্ধতি জেনে সুস্থ ভাবে রোজা রাখুন কিন্তু অহেতুক ভয়ে রোজা ভঙ্গ করবেন না!
ওয়াই টি ডায়াকন (কুরছ জিয়াবিত)
১টা করে ২ বার খেতে পারেন খাবার পর। এটি সুগারের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
মূল্য ২০০/- মাত্র।
বি:দ্র: শর্করা জাতীয় খাবার নিষেধ।
@ ডাঃ মোঃ আব্দুস শুকুর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি